আইফোন প্ল্যান্টে আগুনের জন্য টাটা ইলেকট্রনিক্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি

আইফোন প্ল্যান্টে আগুনের জন্য টাটা ইলেকট্রনিক্সকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি

টাটা ইলেকট্রনিক্স, ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তি উত্পাদন শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, সম্প্রতি তাদের হোসুরে আইফোন উৎপাদন কারখানায় একটি বড় অগ্নিকাণ্ডের পরে নজরদারিতে রয়েছে। এই আগুনের পর, তামিলনাড়ু সরকার কোম্পানিকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছে, যা কর্মী নিরাপত্তা এবং কারখানার কার্যক্রম নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে।

কী ঘটেছিল?

হোসুরে টাটা ইলেকট্রনিক্সের আইফোন কারখানায় সপ্তাহের কাজের সময় আগুন লাগে, যেখানে অ্যাপলের জন্য আইফোন তৈরি করা হয়। এই অগ্নিকাণ্ডের কারণে কারখানার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ থাকে, তবে কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। তবে, অ্যানোডাইজিং ইউনিটে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এটি কারখানার সুরক্ষা ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন তুলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগুন দ্রুত কারখানার বায়ুনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং অ্যানোডাইজিং ইউনিট সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, যা উৎপাদন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ঘটনাটি অপারেশনাল দেরি ঘটায় এবং অ্যাপল তাৎক্ষণিকভাবে এই ঘটনা তদন্তে পদক্ষেপ নেয়।

সরকারের পদক্ষেপ

এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, তামিলনাড়ু সরকার, শিল্প স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অধিদপ্তরের (DISH) মাধ্যমে, টাটা ইলেকট্রনিক্সকে একটি কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছে। এই নোটিশের মাধ্যমে কোম্পানির কাছ থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

সরকারের এই পদক্ষেপ একটি প্রক্রিয়াগত প্রক্রিয়া যা নিশ্চিত করে যে কোম্পানিগুলি সুরক্ষা নিয়মাবলী অনুসরণ করছে এবং তাদের কর্মীদের সুরক্ষা দিচ্ছে। “ফ্যাক্টরিজ অ্যাক্ট” অনুযায়ী, কোম্পানিগুলি নিরাপদ কাজের পরিবেশ বজায় রাখতে বাধ্য, এবং নিরাপত্তা লঙ্ঘন বা দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, দায়িত্বশীল ব্যক্তিকে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে হয়।

নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে যে অ্যানোডাইজিং ইউনিটের থার্মোস্ট্যাট নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থতার কারণেই আগুন লাগে এবং টাটা ইলেকট্রনিক্সকে এই ব্যর্থতা সম্পর্কে তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তের ফলাফল জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

অ্যাপলের প্রতিক্রিয়া

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ প্রযুক্তি ব্র্যান্ড হিসেবে অ্যাপল এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে এবং ঘটনার পরপরই হোসুর কারখানায় একটি সরবরাহকারী দায়িত্ব (SR) দল পাঠায়। এই দলের দায়িত্ব ছিল আগুনের প্রভাব মূল্যায়ন করা এবং টাটা ইলেকট্রনিক্সকে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশনা দেওয়া।

অ্যাপল তার সরবরাহকারীদের কার্যক্রম নিয়ে কঠোর নির্দেশিকা পালন করে, বিশেষ করে নিরাপত্তা এবং নৈতিক মানগুলির ক্ষেত্রে। SR দলের অংশগ্রহণ অ্যাপলের কর্মীদের সুরক্ষার প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার একটি উদাহরণ।

কার্যক্রম পুনরায় শুরু

এই ঘটনার পরে, টাটা ইলেকট্রনিক্স হোসুর কারখানায় আংশিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটি কারখানাটি সম্পূর্ণরূপে চালু করতে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে ধ্বংস হওয়া অ্যানোডাইজিং ইউনিটটি পুনর্নির্মাণে আরও সময় লাগবে।

এই প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, টাটা ইলেকট্রনিক্স অ্যাপলের বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়ে গেছে। ভারত অ্যাপলের উৎপাদন বহির্ভূতকরণের একটি মূল কেন্দ্র হয়ে উঠেছে, বিশেষত চীনের বাইরে তাদের উৎপাদন সম্প্রসারণে। প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে প্রতিটি সাতটি আইফোনের একটি ভারতে তৈরি হচ্ছে এবং অ্যাপল ভবিষ্যতে এটি বাড়িয়ে ২৫% করার পরিকল্পনা করছে।

ভারতে অ্যাপলের সম্প্রসারণ

টাটা ইলেকট্রনিক্সের কারখানায় এই আগুনের ঘটনা এমন সময় ঘটেছে যখন অ্যাপল ভারতে তার উপস্থিতি ব্যাপকভাবে বাড়াচ্ছে, উভয়ই উৎপাদক এবং খুচরা বিক্রেতা হিসাবে। ভারতের ক্রমবর্ধমান স্মার্টফোন বাজার অ্যাপলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে FY24-এ তাদের বার্ষিক বিক্রি $৮ বিলিয়ন ডলার স্পর্শ করেছে। চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে, অ্যাপল ভারতজুড়ে চারটি নতুন খুচরা দোকান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা দেশে তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

ভারতের বাজার শুধু বিক্রির জন্য নয়, অ্যাপলের উৎপাদন সম্ভাবনাও কাজে লাগাচ্ছে। সম্প্রতি ভারতে উন্মোচন হওয়া আইফোন ১৬ এর সম্পূর্ণ সিরিজ ভারতে তৈরি করার পরিকল্পনা করছে অ্যাপল। এটি ভারতে অ্যাপলের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বের ইঙ্গিত দেয়।

পরবর্তী পদক্ষেপ

টাটা ইলেকট্রনিক্সের কাছে এখন তামিলনাড়ু সরকারের কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার এবং আগুনের কারণ নিয়ে কর্তৃপক্ষকে উত্তর দেওয়ার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কোম্পানির দক্ষতার সাথে এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ, অ্যাপল এবং এর অন্যান্য ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

আগুনের তদন্ত এবং টাটা ইলেকট্রনিক্সের অভ্যন্তরীণ তদন্ত এই ঘটনার মূল কারণ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এদিকে, তামিলনাড়ু সরকারের নজরদারি নিশ্চিত করবে যে সুরক্ষা নিয়মাবলী মেনে চলা হচ্ছে এবং কর্মীদের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।