স্মার্ট টিভি মার্কেটের অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় গুগল: ভারতের নতুন সেটেলমেন্ট স্কিম প্রথমবার ব্যবহৃত

স্মার্ট টিভি মার্কেটের অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় গুগল: ভারতের নতুন সেটেলমেন্ট স্কিম প্রথমবার ব্যবহৃত

 

গুগল বর্তমানে ভারতে একটি অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় জড়িত রয়েছে, কারণ ভারতের প্রতিযোগিতা কমিশন (CCI) অভিযোগ করেছে যে গুগল প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে। অভিযোগটি গুগলের স্মার্ট টিভি প্রস্তুতকারকদের সাথে চুক্তি নিয়ে, যেখানে সিসিআই দাবি করেছে যে এই চুক্তিগুলো অনুচিত এবং প্রতিযোগিতা বিরোধী। তদন্তের সময় গুগল প্রথম কোম্পানি হিসেবে ভারতের নতুন সেটেলমেন্ট স্কিম ব্যবহার করছে, যা অ্যান্টি-কম্পিটিটিভ কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য ১৫% জরিমানা কমানোর সুযোগ দেয়।

স্মার্ট টিভি সেক্টরে গুগলের বাজার ক্ষমতার অপব্যবহার

তদন্তটি ২০২১ সালে শুরু হয়, যখন দুই ব্যক্তি CCI-তে অভিযোগ করে যে গুগল অ্যান্ড্রয়েড স্মার্ট টিভি মার্কেটে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। অভিযোগটি ছিল যে গুগল স্মার্ট টিভি প্রস্তুতকারকদের সম্পূর্ণ গুগল অ্যাপ্লিকেশন সুইট প্রিইনস্টল করার জন্য বাধ্য করছে, যদি তারা শুধু ইউটিউবের মতো একটি নির্দিষ্ট অ্যাপ চায়।

এই শর্তটি প্রস্তুতকারকদের জন্য অনুচিত, কারণ তারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কোন অ্যাপ ইন্সটল করবে তা বেছে নিতে পারছে না। CCI-র তদন্ত বিভাগ এই ঘটনা যাচাই করার পর, সিদ্ধান্তে আসে যে গুগলের এই কার্যকলাপ শুধু অনুচিত নয়, এটি ভারতের প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করছে। সিসিআই পেয়েছে যে গুগলের চুক্তি প্রতিযোগিতার জন্য ক্ষতিকারক এবং বাজারের সমতা নষ্ট করছে।

গুগলের সেটেলমেন্ট প্লিয়া: একটি নতুন পদক্ষেপ

তদন্তের পর, গুগল দ্রুত সিসিআই-তে একটি সেটেলমেন্ট প্লিয়া দাখিল করেছে, যা এই নতুন স্কিম ব্যবহারের প্রথম উদাহরণ। এই স্কিম, যা সম্প্রতি প্রবর্তিত হয়েছে, অ্যান্টি-কম্পিটিটিভ কার্যকলাপের জন্য অভিযুক্ত কোম্পানিগুলির জন্য ১৫% জরিমানা কমানোর সুযোগ দেয়।

এই পদক্ষেপটি গুগলের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রকদের সাথে সহযোগিতা করার ইচ্ছার প্রতিফলন, এবং সম্ভবত দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এড়ানোর একটি প্রচেষ্টা। বর্তমানে সিসিআই এই প্লিয়া পর্যালোচনা করছে, এবং এটি মঞ্জুর হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।

এই বিষয়ে গুগলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হলেও, এই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত গুগলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই তদন্ত কেন গুরুত্বপূর্ণ

এই মামলাটি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, এটি ভারতে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির বাজার কার্যকলাপ নিয়ে বাড়তে থাকা উদ্বেগের ইঙ্গিত দেয়, বিশেষত স্মার্ট টিভি মার্কেটে, যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতের ক্রেতারা ক্রমশ স্মার্ট টিভির দিকে ঝুঁকছে, তাই এই মার্কেটে প্রতিযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে সঠিক মূল্য এবং উদ্ভাবন নিশ্চিত হয়। কিন্তু গুগলের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে আধিপত্যের কারণে আশঙ্কা রয়েছে যে তারা স্মার্ট টিভির ডিজিটাল ইকোসিস্টেমে তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে প্রতিযোগিতাকে বাধা দিচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, এই তদন্তটি একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে যে ভবিষ্যতে ভারতের নিয়ন্ত্রকরা কিভাবে অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির কার্যকলাপ পরিচালনা করবে। বিশেষত নতুন সেটেলমেন্ট স্কিম ভবিষ্যতে আরও বেশি কোম্পানি ব্যবহার করতে পারে, যারা প্রতিযোগিতা আইন লঙ্ঘন করেছে কিন্তু কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনায় আগ্রহী। গুগলের জন্য, এটি দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া এড়ানোর এবং আর্থিক জরিমানা কমানোর একটি উপায় হতে পারে।

গুগলের পূর্বের অ্যান্টিট্রাস্ট জরিমানা

এটি গুগলের প্রথমবার সিসিআই-এর সাথে সমস্যা নয়। ২০২২ সালে, সিসিআই দুটি পৃথক অ্যান্টিট্রাস্ট মামলায় গুগলকে মোট ২২৭৪ কোটি টাকা জরিমানা করে। এই মামলাগুলো গুগলের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম মার্কেটে কার্যকলাপ নিয়ে ছিল, যেখানে সিসিআই পেয়েছে যে গুগল মোবাইল ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের উপর অনুচিত শর্ত আরোপ করেছে।

এই আগের জরিমানাগুলি দেখায় যে ভারতীয় নিয়ন্ত্রকরা গুগলের কার্যকলাপ নিয়ে আরও গভীরভাবে যাচাই করছে, এবং কোম্পানিটি দেশে আইনি চ্যালেঞ্জ থেকে মুক্ত নয়। স্মার্ট টিভি ক্ষেত্রে চলমান সেটেলমেন্টের মাধ্যমে গুগল সম্ভবত তার পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে।

অন্যান্য বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি সিসিআই-এর তদন্তের আওতায়

গুগল ছাড়াও, অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, এবং অ্যাপলও ভারতে অ্যান্টিট্রাস্ট তদন্তের আওতায় রয়েছে। অ্যামাজন এবং ফ্লিপকার্ট উভয়েই তাদের প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট বিক্রেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে, যা অন্য বিক্রেতাদের জন্য প্রতিযোগিতার বাধা সৃষ্টি করেছে।

অন্যদিকে, অ্যাপল অ্যাপ স্টোর মার্কেটে তার আধিপত্যের অপব্যবহারের জন্য অভিযুক্ত হয়েছিল। সিসিআই-র একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে অ্যাপল অনুচিত শর্ত আরোপ করছে, যা অ্যাপ ডেভেলপারদের জন্য বাধা তৈরি করছে। কিন্তু অ্যাপল যখন অভিযোগ করেছে যে সিসিআই তাদের সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস করেছে, তখন সিসিআই সেই রিপোর্ট প্রত্যাহার করে।

সিসিআই-এর সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিরোধ

যদিও সিসিআই বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, অনেক কোম্পানি আদালতে গিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করছে। উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ফ্লিপকার্ট বিক্রেতারা কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেছে, সিসিআই-এর তদন্ত বন্ধ করার জন্য।

তদ্ব্যতীত, অ্যামাজনের সাবেক বিক্রেতা আপারিওও কর্ণাটক হাইকোর্টে আবেদন করেছে, সিসিআই-এর তদন্ত বন্ধ করার জন্য। এই আইনি লড়াইগুলি দেখায় যে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি তাদের নিজেদের রক্ষা করার জন্য আইনগত উপায় খুঁজছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া: একটি নতুন ডিজিটাল প্রতিযোগিতা বিল

বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলির অ্যান্টি-কম্পিটিটিভ কার্যকলাপ রোধ করার জন্য, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি খসড়া ডিজিটাল প্রতিযোগিতা বিল প্রস্তাব করেছে। এই আইনটি বড় কোম্পানিগুলির কার্যকলাপ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, বিশেষত ডিজিটাল মার্কেটে।

এই বিলের লক্ষ্য হলো বড় কোম্পানিগুলির বিপুল বাজার ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রতিযোগিতা বজায় রাখা, যাতে ছোট এবং মাঝারি ব্যবসায়ীরা