মশার কাজ মশা করেছে, কামড় দিয়েছে গায়…
![](https://times-bd24.com/wp-content/uploads/2022/10/4543c43011d62891968392774e093b99-640x380.jpg)
মশার কাজ মশা করেছে, কামড় দিয়েছে গায়…
বয়স হয়েছিল তাঁর ৩৯ বছর। মারা গেলেন মশার কামড়ে, ডেঙ্গুতে; ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ। মিরপুর ক্যান্ট. পাবলিক স্কুলের সদা হাসিময় শিক্ষক ফারজানা ফাতেমা রেখে গেছেন ১৩ বছরের ছেলে আর ৬ বছরের মেয়েকে। ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত সারা দেশে মারা গেছেন ৮৩ জন।
মশার কথা এলেই প্রথমে মানুষের কথা আসে, অন্য কোনো কারণে নয়—মশা লিখতে ম লাগে, মানুষ লিখতেও। ম দিয়ে অনেক শব্দের মধ্যে আরও একটি শব্দ দ্রুত মনে পড়ে যায়—মেয়র। আরও একটু আদব দিয়ে বললে মহামান্য মেয়র, এই মহামান্যতেও ম লাগে।
মেয়র মশা মারিবার পর উহা উড়িয়া গিয়া প্রমাণ করিল, মশা মরে নাই। তিন যুগে মশা মারার জন্য এই দেশে কত টাকা খরচ হয়েছে, এটা অনেকেই জানি; কম আর বেশি। প্রতিবার মশার উপদ্রব বাড়লে মেয়র মহোদয়েরা কী বলেন, এটাও জানি। আর মশা মারার ওষুধে কতটুকু ওষুধ থাকে, জানি এটাও।
কিন্তু এটা কি জানি—মশার কামড় থেকে বাঁচার অন্য রকম একটা উপায় আছে? উপায়টা হলো দুর্গন্ধময় কোনো প্রাণীকে জাপটে ধরে ঘুমিয়ে পড়া। আর এটার সত্যতা বলে গেছেন জে ডব্লিউ গিলেট নামে এক ব্রিটিশ বায়োলজিস্ট, তাঁর দ্য মসকুইটো বইয়ে। অনেক আগে থেকেই এই পদ্ধতি পালন করে আসছে ইতালীয়রা। শূকরছানা নিয়ে ঘুমিয়ে দেখা গেছে, সারা রাত মশা যা করেছে, তা এই দুর্গন্ধময় প্রাণীটিকেই করেছে, মানুষের গায়ে কোনো ছোঁয়াও দেয়নি!
চিন্তায় ফেলে দিলাম। এ দেশে এ রকম দুর্গন্ধময় প্রাণী কই পাই? আছে ভাই, আছে। যারা কথায় কথায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বরখেলাপের দুর্গন্ধ ছড়ায়, ক্ষমতায় গিয়ে যত্রতত্র ক্ষমতার দুর্গন্ধ ছড়ায়, দায়িত্ব পালনে দায়িত্বহীনতার দুর্গন্ধ ছড়ায়, আমাদের আশপাশে তেলাপোকার মতো বিচরণ করা এ রকম কাউকে বেছে নিতে পারেন নির্দ্বিধায়।
মশা কিন্তু মানুষের উপকারও করে। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না?
হাইতির বিদ্রোহ দমনে নেপোলিয়ান বোনাপার্ট যতগুলো সৈন্য, অফিসার, ডাক্তার, নাবিক পাঠিয়েছিলেন ১৮০১ সালে, তার মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার জন মারা যান মশার কারণে, ইয়েলো ফিভারে। এর তিন বছর পর স্বাধীন হয়ে যায় হাইতি!
মশাদের বেঁচে থাকার ক্ষমতাও প্রচুর। আফ্রিকায় যে মশা গাছের গর্তে জীবনযাপন করে এবং গাছের পাতার রস খেয়ে জীবন বাঁচায়, সেই একই মশা কানাডায় এসে তুষারগলা পানিতে বাসা বাঁধে আর সুযোগ পেলেই গরম রক্তের প্রাণীদের আক্রমণ করে। শুষে নেয় মানুষের শরীরের রক্ত।
ভয় পেলেন! আমার-আপনার রক্ত বুঝি কেউ শুষে নিচ্ছে না নীরবে—প্রতি সেকেন্ডে, প্রতি মিনিটে, প্রতি ঘণ্টায়? বাজারে যান টের পাবেন, হাসপাতালে–সরকারি কোনো অফিসে গেলেও টের পাবেন।
বলুন তো, কে বেশি ভয়ংকর—মশা, না বাঘ?
জানি, কোনো ভাবনাচিন্তা না করেই আপনি বলে ফেলবেন—বাঘ। কিন্তু সত্যটা হচ্ছে—মশা। বাঘকে খাঁচায় বন্দী করে চিড়িয়াখানায় আমরা আনন্দ উপভোগ করি, আর প্রতি রাতে মশারির খাঁচায় নিজেকে বন্দী করে আমরা নিজেদের রক্ষা করি। আর এই মশারি টানানো নিয়ে কত দম্পতি মুখ না দেখাদেখি করে দিন কাটায়!
আরও আছে—বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর মশাবাহিত রোগে বিশ্বে মৃত্যু হয় লাখো মানুষের। আর বাঘের আক্রমণে? বিভিন্ন সূত্রমতে, তা ২০০–এর মতো।
এবার বুঝে নিন—মশা নিয়ে কেন মশকরা করা ঠিক না!
আর একটু।
রাস্তার পাশে মশা মারার ওষুধ বিক্রি করছেন একজন। ছোট ছোট বোতলে তরল ওষুধ। এক লোক এক বোতল ওষুধ কেনার পর বললেন, ‘এটা ব্যবহার করব কীভাবে?’
‘খুব সোজা।’ বিক্রেতা উত্তর দিলেন, ‘প্রথমে একটা মশা ধরবেন, অনেকটা জোর করে তার মুখটা হাঁ করাবেন, তারপর বোতল থেকে এক ফোঁটা ওষুধ ঢেলে দেবেন ভেতরে। ব্যস, চিতপটাং।’
‘ধুৎ, এটা কী বলছেন আপনি!’ ধমকে উঠলেন ক্রেতা।
এতক্ষণ নিচু করে রাখা মাথা উঁচু করলেন বিক্রেতাটি। সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতা চমকে উঠে বললেন, ‘আরে, মেয়র সাহেব না! মানে আমাদের মেয়র ছিলেন না আপনি! মারা গেছেন তো আপনি কয় বছর আগে।’
‘জি। বিচারকাজটা চলার সময় স্রষ্টা বললেন, যা তোর সব পাপ মাফ করে দিতে পারি, যদি ৪০ বছর মশার ওষুধ বিক্রি করিস রাস্তায় বসে।’ বিক্রেতা মরহুম মেয়র মুখটা ম্লান করে বললেন, ‘সারা জীবন সরকারি টাকায় মশার ওষুধ কিনেছি, কিন্তু কী ওষুধ কিনেছি জানি না; কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, জানি না তা–ও। তাই আজও বলতে পারব না, আমার সামনে কিসের ওষুধ, মশা মারতে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় এই ওষুধগুলো!’